মোঃ ফিরোজ শাঁই,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা–৫ (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানার আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি কথা বলেছেন দৈনিক প্রতিদিনের আলোর সাথে, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ ফিরোজ শাঁই।
ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্নাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজল বিজয়ী হয়েছেন। ট্রাক প্রতীকে মোল্লা সজল ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৩১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ (মুন্না) ৫০ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়েছেন।
রাজধানীর দক্ষিণ পূর্ব কোনো অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত এই আসন।
প্রশ্ন + উত্তর
প্রতিদিনের আলো: প্রথম বারের মতো ভোট করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কী রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল আপনাকে?
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: জননেত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তাই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আল্লাহর রহমত, তৃণমূল নেতাকর্মীদের চেষ্টায় ও এলাকাবাসীর ভোটে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর (নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্নার) বিপক্ষে গিয়ে আমার জয় ছিনিয়ে এনেছি। আমি নির্বাচনী প্রচারকালীন কোনো বাধায় সম্মুহীন হয়নি তবে আমার তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোথাও কোথাও বাধার মুখে পরেছিল।
প্রতিদিনের আলো: যার সঙ্গে নির্বাচন করে আপনি জিতেছেন তার প্রতি আপনার কী আহবান থাকবে? একটি বড় দল বিএনপি কিন্তু নির্বাচনে এলো না এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: তার (নৌকার পরাজিত প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্নার) প্রতি আহবান থাকবে নির্বাচনকালীন আমরা প্রতযোগিতায় একে অপরের বিপক্ষে ছিলাম কিন্তু এখন দল (আওয়ামী লীগ), এলাকা ও দেশের স্বার্থে আবার এক হয়ে মিলে-মিশে কাজ করব।
এই নির্বাচন বিএনপি বানচাল করতে চেয়েছিল তারা ভোটের দিন হরতাল ডেকেও মানুষকে আটকাতে পারেনি বরং মানুষ গত নির্বাচন থেকে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে তাদের ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিএনপিকে মানুষ প্রত্যাহার করেছে।
প্রতিদিনের আলো: নির্বাচনী প্রচারের সময় অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে সেই প্রতিশ্রতি রাখতে পারবেন বলে কি মনে হচ্ছে?
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: নির্বাচনী প্রচারের সময় বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেইসব প্রতিশ্রতি রাখতে চেষ্টা করব। কীভাবে আগামী পাঁচ বছরের কাজ করবো সেসবের কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছি। আমার মরহুম বাবা আওয়ামী লীগের সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই। এর জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
প্রতিদিনের আলো: আপনার নির্বাচিত এলাকায় প্রধান সমস্যা হলো অবৈধ অটো রিক্সার ভয়াবহ যানজট, মাদক, চাঁদাবাজি, চোর-ডাকাতি ও কিশোর গ্যাংয়ের খুব উপদ্রব রয়েছে। এসব বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কী থাকবে?
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: আমার প্রথম কাজ হবে ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী এলাকা হতে যানজট, মাদক, চাঁদাবাজি, চোর-ডাকাতি ও কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব নির্মূল। আমি এরই মধ্যে বেশ কিছু কর্ম পরিকল্পনা গুছিয়ে রেখেছি। আশা করছি সবাইকে নিয়ে সামাজিক সচেতনতা এবং প্রশাসনের সহয়তায় এসব অপকর্ম সমাজ থেকে নির্মূল করব।
প্রতিদিনের আলো: আপনার নির্বাচিত এলাকা দেশের অন্যান্য এলাকা হতে কাক্ষিত উন্নয়ন হয়নি এবং বিশেষ করে এলাকার রাস্তা-ঘাট ভাঙা ও এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সেই ক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হবে।
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের প্রায় সব এলাকায় উন্নায়ন করেছেন তবে সে হিসেবে আমাদের ঢাকা-৫ অঞ্চল সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। আগের আওয়ামী লীগের এমপি (কাজী মনিরুল ইসলাম মনু) এলাকার বরাদ্দ পেয়েও তা কেন অব্যাহত রাখেননি সেটা তিনি ভালো জানেন। তিনি যদি কাজ করতেন তাহলে এই এলাকার রাস্তাঘাট এমন ভাঙা থাকত না। আপনাদের সবার দোয়ায় আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি তাই এবার আমার কাজ হবে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা।
প্রতিদিনের আলো: জাতীয় সংসদে আপনার ভূমিকা কী হবে? জনবিরোধী কোনো কাজ হলে সেটির বিরুদ্ধে কতোটা ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে হয়?
মশিউর রহমান মোল্লা সজল: ঢাকা-৫ আসনের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি তাই জাতীয় সংসদে আমার ভূমিকা হবে এলাকার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা বলে আমাদের অধিকার আদায় করা। এলাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তা-ঘাট ভাঙা তাই এসবের বরাদ্দ এনে রাস্তা-ঘাট ঠিক করা। এলাকার আরও একটি বড় সমস্যা হলো পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস থাকে না। এই সীমাহীন কষ্ট দ্রুত সমাধান করা। এর জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচন হয় ২৯৯ আসনে। ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ছিলেন ১৯৭১ জন। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি আসন, এছাড়া অন্যান্য দল থেকে পেয়েছেন ৩টি আসন।