মোক্তার হোসেন, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ-
সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতি বছররে ন্যায় ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণের অনুমতি নিয়ে দল বেঁধে কয়রার মৌয়ালেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন। এ কার্যক্রম চলবে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মৌয়াল চলতি মৌসুমে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করা একটি প্রচলিত পেশা। সারা বছরই কিছু পরিমাণ মধু এই বন থেকে সংগ্রহ করে এবং সঠিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানসম্মত মধু হিসেবে সমাদৃত।যার ফলে রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব।
কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের হাতে মধু সংগ্রহের অনুমতিপত্র (পাশ) দেওয়া হয়েছে। মধু আহরণের অনুমতি পেয়ে কয়রার মৌয়াল পরিবারগুলোতে বেশ খুশি।
অনুমতি পেয়েই সকাল থেকে দল বেঁধে কয়রার ৫ শতাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।
প্রথম দিনে কয়রার কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে ৫৭টি বানিয়াখালী স্টেশন হতে ১৬টি ও কোবাদক স্টেশন হতে ১৪টি নৌকার পাস দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রায় ৫ শতাধিক মৌয়াল প্রথম দিনে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।
কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, এবার প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা ও মোমের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় ১৪ দিনের জন্য মধু আহরণের পাস দেওয়া হয়েছে।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলে ৭ থেকে ৯ জন সদস্য থাকেন। প্রথম পর্যায়ে তারা ১৪ দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে মধু ও মোম সংগ্রহ করে ফিরে আসবেন। পরে আবার সুন্দরবনে যাবেন। এভাবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত টানা সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হবে।
মহেশ্বরীপুরের মৌয়ালী মাওলা বক্স বলেন, আমি মহাজনের থেকে ধার দেনা নিয়ে সাতজনের একটি বহর নিয়ে বনে যাচ্ছি। বেশি মধু না পেলে চালান মার যাবে। তখন ঋণের বোঝা টেনে বেড়াতি হবে। এলাকায় কাজ-কাম না থাকায় বাধ্য হয়ে এ বছর মধু সংগ্রহে যাচ্ছি। কয়রার মৌয়ালদের দাবি মহাজন প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে সুদ বিহীন লোনের ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের পক্ষে ভাল হতো।
বানিয়াখালী স্টেশন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুমকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মৌয়ালদের মধু আহরণ করার উপর সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসএিফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, এবারের মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫০ কুইন্টাল এবং মৌমা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮৬ কুইন্টাল।৯ টি নির্দেশনার মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনে মধু আহরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। নৌকায় ১০-১২ জন মৌয়ালী অবস্থান করতে পারবেন। একজন মৌয়ালী ১৪ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু ও ১৫ কেজি মোম। তা ছাড়া কোনো মৌয়ালীরা যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির বন কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।