প্রতিদিনের আলো রিপোর্টঃ-
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাদের অনুকূলে প্রাপ্ত ১০টি সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্পণ করেছেন। ওই ১০টি আসনে প্রধানমন্ত্রী যাদের মনোনয়ন দেবেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাতে সমর্থন জানাবে। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর সায় মেলেনি।
এই দাবির জবাবে সংসদ নেতা বলেন, আপনারা সবাই আমার। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
একদল আমার ডান হাত, অন্য দল বাম হাত
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রায় সবাই একবাক্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন পর্যায়ে পদপদবি ধারণ করছেন। সক্রিয়ভাবে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সংসদের বাইরের মতো সংসদেও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান। আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে পরিচয় দিতে চান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই আমার। একদল আমার ডান হাত, অন্য দল বাম হাত। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে আছেন। আপনাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে স্বতন্ত্র এমপিরা তাদের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এ সময় স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা বললে প্রধানমন্ত্রী তাতে সরাসরি সায় দেননি।
১০টি সংরক্ষিত আসনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর হাতে
পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ প্রতিদিনের আলো কে বলেন, আমরা সবাই আওয়ামী লীগে থাকতে চেয়েছি। আমাদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অনুকূলে প্রাপ্য সংরক্ষিত নারী আসনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে আমরা আগামীকালই স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদকের কাছে কাগজ জমা দেবো। দলের হয়ে পরে তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করে যাবো। সংরক্ষিত আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকেই এর সিদ্ধান্ত নেত্রীর ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করিনি। আগামীকাল এটা চূড়ান্ত হবে। দেখা যাক কী হয়।
হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা স্বতন্ত্র এমপিরা সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
এদিকে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্রই থাকবেন। তিনি বলেন, তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে। এই একটা বিষয় আমাদের সংসদ নেতা, দলের সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলেছেন।
তিনি বলেন, তারা (স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য) দাবি করেছে আওয়ামী লীগই থাকতে চায়। ভিন্ন কোনও নামে পরিচয় দিতে গেলে আমাদের বিবেক আবেগ আহত হয়। নিজেরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ বিভেদ মিটিয়ে ফেলতে হবে। নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নারী সংরক্ষিত আসনের ব্যাপারে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা যাদের মনোনীত করবেন তাদের প্রতি স্বতন্ত্রদের সমর্থন থাকবে, তারা বলেছেন।
স্বতন্ত্র এমপিরা কোন হুইপের আওতায় থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিফ হুইপ সংসদ নেতার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন মার্কার কিছু সংঘাত, সহিংসতা, অন্তর্কলহ, এসব বিষয় রয়েছে। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না—আমাদের সবাইকে বলেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এর বাইরে এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন, যাদের মধ্যে ৫৮ জনই সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।